প্রত্যয় ডেস্ক রিপোর্ট:কিছুদিন আগে আমার টুইটার অ্যাকাউন্টে অপরিচিত এক ফলোয়ার অ্যাকাউন্ট হতে ম্যাসেজ আসে। তিনি আমাকে একজন মহিলা এবং আমেরিকার নাগরিক পরিচয় দেন। তিনি আমাকে বলেন যে তিনি আমেরিকান নার্স আর্মি অফিসার। তিনি ও তার টিম জাতিসংঘের একটি মিশনে সিরিয়া অবস্থান করছেন বর্তমানে। সেখানে তারা ট্রাঙ্কে প্রচুর অর্থ আবিষ্কার করেন যেটা ভাগ করার পর তার অর্থের পরিমাণ দাড়ায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। জাতিসংঘের নীতি অনুযায়ী তিনি অর্থটা সরাসরি আমেরিকা নিতে পারবেন না বিধায় বাংলাদেশে উক্ত অর্থ ইনভেস্ট করতে চান। এজন্য আমার কাছে তিনি সে অর্থ পাঠাতে চান যাতে আমি তা নিরাপদে সংরক্ষণ করি এবং বিনিময়ে আমাকে ৪০% দেওয়ার কথা বলেন। আমার বিশ্বাস হয় নাই উনার কথা। আমি বারবার চেষ্টা করি উনার সম্পূর্ণ পরিচয় জানতে। কিন্তু উনি তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কুরিয়ার মাধ্যমে অর্থ আমাকে পাঠানোর কথা বলে উনি আমার নাম, ঠিকানা, ইমেইল, মোবাইল নাম্বার জানাতে বলেন। আমি উনার আসল পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু উনাকে বারবার উনার পাসপোর্ট কপি দেখাতে বললেও উনি তা এড়িয়ে চলেন। আর তাই আমার সন্দেহ হয়। গুগলে অর্থ পাচার বিষয়ে সার্চ করার পর বুঝতে পারি এটা অর্থ পাচারের আওতায় পড়ে। আমার আগে থেকে অর্থ পাচার সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান ছিল না। তাই শুরুতেই বুঝতে পারি নাই। এখন আমার ভয় হচ্ছে উনি কোনো ষড়যন্ত্র করবেন কিনা এ নিয়ে। আশা করি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে না। তারপরও ভয় হচ্ছে আমার ও দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে। কারণ তিনি বলেছেন, অর্থের বাক্সটা এয়ারপোর্টে ধরা পড়বে না। কারণ ওইটা কূটনীতিক পদ্ধতিতে আসবে। উনি এও বলেন যে, ঐ পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী ও বড় বড় রাজনীতিবিদরা দেশ থেকে বিদেশে অর্থ সরিয়ে নেন। তাই ভয় হচ্ছে; কেননা, এমনও হতে পারে তিনি আমার ঠিকানায় অর্থ না হলেও অবৈধ কোনো কিছু পাঠাতে পারেন। কারণ উনার কথা অনুযায়ী বাক্সটা এয়ারপোর্টের চেকআপেও ধরা পড়বে না ভেতরে কি আছে তা। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকা ভালো।
আসলে এটি একটি পুরোপুরি প্রতারণা। প্রতারক চক্র এরকম ভাবে মানুষদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়। আমি সকল কিছু অবগত করে সিআইডি সাইবার পুলিশকে জানিয়েছি। উনারা বলেছেন আমার দায়িত্বপূর্ণ আচরণ এবং সচেতনতার জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছি। উনি হয়তো আমাকে অর্থের কথা বলে লোভ দেখিয়ে পরবর্তীতে আমাকে কিছু অগ্রিম টাকা দিতে বলতেন বা আস্তে আস্তে বেশ কিছু তথ্য নিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতেন। কিন্তু এমনও হতে পারে উনি আমার তথ্য খারাপভাবে ব্যবহার করে আমাকে ফাঁসাতে পারেন। তাই এ জাতীয় সমস্যায় পড়লে যাতে সহজেই তা থেকে মুক্ত হতে পারি এজন্য সিআইডি সাইবার পুলিশকে সবকিছু আগে থেকে জানিয়ে রেখেছি। আমার ভুল ছিল উনাকে আমার ঠিকানা, ইমেইল ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেওয়া। যদিও আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ওটা প্রতারণা ছিল। তাও এসব তথ্য দিলে কিছু হবে না ভেবে দিয়ে দিছিলাম। যেহেতু আমাকে টোপ দিয়ে ফাঁদে ফেলতে পারেনি, তাই আমার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সিআইডি সাইবার পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেন। এখন আমি চিন্তামুক্ত। সিআইডি সাইবার পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সময় অনুযায়ী সাপোর্ট ও সহযোগিতা করার জন্য। আশা করি সাধারণ মানুষসহ সকলে নিজে সতর্ক থাকবেন এবং সচেতনতা বলয় তৈরি করে আপনার শুভাকাঙ্খীদেরকেও সুরক্ষিত রাখবেন।
রিমন বড়ুয়া,
শিক্ষার্থী, লেখক ও গবেষক।